দমবন্ধ (৫)

শুভ কোথায়শুভ কোথায়?” ডেকে ডেকে সারা। কিন্তু শুভর পাত্তা নেই। কুংকিমার (আমার মেজমাসি কুমকুম এর ) দুই ছেলে জয়, শুভ। বিচ্ছু বললে কম বলা হয়। ছেলেবেলায় শুভ ঢাকায় ঝিকাতলার দোতালা বাসার উঁচু তাকে বসে থাকত। তারপর আয়নাতে দেখে বাড়ির সামনে যে লোক যেত তার গায়ে ঢিল মারতো। ওদের যন্ত্রনায় আমার মাসি মেসোর জনসমাজে মুখ দেখানো কঠিন ছিল।

তাই যখন ওদের পর আমার মাসতুত বোন মৌটুসির জন্ম হ'ল দাদুভাই সারা ক্যাম্পাসের চেনা শোনা সব বাড়িতে রসগোল্লা পাঠিয়ে দিল। ঘর আলো করে সোনা রঙের নাতনি এসেছে। মৌটুসিকে সোনালি রঙের একটা ডলপুতুল বলেই মনে হত। মাথা ভর্তি ঝাঁকরা কোঁকড়ানো চুল। দাদুভাই এর বক্তব্য এবার মেয়েটার হয়তো একটু শান্তি হবে। দুই জলদস্যু নাতির পর শান্তমত এক রাজকন্যা নাতনি। 

এদিকে শুভর তো পাত্তা নেই। কুংকিমারা ফেরত যাবে। বাসের সময় হয়ে গেছে। শুভ নেই। শুভ নেই। আসলে কুংকিমারা ঢাকা থেকে গরমের ছুটিতে রাজশাহী আমাদের বাড়ি এসেছে। এমনি সবসময়। হয় আমরা ঢাকা যাই নয় ওরা রাজশাহী আসে। পূজার ছুটিঈদের ছুটিগরমের ছুটি বা শীতের ছুটি কোনোটাতেই কোনদিন কুলুমানালি যাওয়া হয়নি আমাদের । বরফে ঢাকা পাহাড়চূড়া ঝাঁপিয়ে পড়া ঝর্ণা কিংবা পাহাড়ের মাঝের সবুজ উপত্যকা দেখা হয় নি। শুধু মানুষের হৃদয় দেখেছি মানুষের সাথেই সময় কাটিয়েছি। অপরূপ সব সময়। অবশেষে শুভকে পাওয়া গেল। বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। ও বাড়ি ফিরে যাবে না।

দিদার কাছে শুনেছি আমি নাকি ছেলেবেলায় সবাইকে বলে বেড়াতাম আমরা দুই ভাই দুই বোন। কিন্তু ভাই দুটো খুব দুষ্টু। মা সামলাতে পারে না বলে আমার মাসির কাছে ভাই দুটোকে দিয়েছে। জানি না নিজের ভাই এর থেকেও আপন হয় কিনা। 

Comments



কল্যাণী রমা-র জন্ম ঢাকায়। ছেলেবেলা কেটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ভারতের খড়গপুর আই আই টি থেকে ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল কমুনিকেশন ইঞ্জিনীয়ারিং-এ বি টেক করেছেন । এখন আমেরিকার উইস্কনসিনে থাকেন। অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সিনিয়র ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে কাজ করছেন ম্যাডিসনে।
প্রকাশিত বইঃ
আমার ঘরোয়া গল্প;
হাতের পাতায় গল্পগুলো – ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা;
রাত বৃষ্টি বুনোহাঁস – অ্যান সেক্সটন, সিলভিয়া প্লাথ, মেরি অলিভারের কবিতা;
মরণ হ’তে জাগি – হেনরিক ইবসেনের নাটক;
রেশমগুটি;
জলরঙ;
দমবন্ধ।


Popular Posts