ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের বাসায় বারান্দার অনেকটা অংশ ঘিরে ফেলা হয়েছে। আমাদের ঘুম ভাংছে মোরগের কোঁকর কোঁ শব্দে। ব্যাপার কি? দাদুভাই ভাবছে পরিবারের সকলের ফ্রেশ মুরগীর ডিম খাওয়া দরকার। অনেকগুলো মুরগী বারান্দার উপর ঘোরাফেরা করছে। ভুষি খাচ্ছে। মাঝে মাঝে কোথা থেকে যেন শামুক, ঝিনুক আসছে। তারা তাও খাচ্ছে। ঝিনুকের ভিতরের প্রাণটা আমার তখনই দেখা। চামচ দিয়ে কুঁড়ে ঝিনুকের ভিতরটা খেতে দেওয়া হচ্ছে। আর খোলসটা গুঁড়ো করে ভুষির সাথে মিশিয়ে। শামুক ঝিনুক খেলে নাকি ওদের ডিমের খোলা শক্ত হবে। মুরগি পোষা শুধু ডিমের জন্য। শুধু ডিম। পোষা মুরগি তো আর ধরে খাওয়া যায় না। ওরা পুষ্যি। বড় আদরের। কিছু হলুদ রঙের তুলতুলে বাচ্চাও নিয়ে আসা হয়েছে। তারা এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে। ব্যতিব্যস্ত অবস্থা।
এরকম নানা 'ফিরে চল মাটির টানে' জাতীয় আবেগের ফল স্বরূপ নানা কিছু গজাতেও শুরু করল দাদুভাই এর বাগানে। গ্রাম নয়, ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস। কিন্তু তাতে কি?দাদুভাই এর বাগানে কলাগাছ আছে। কলা খাই। কলাগাছের থোড়, মোচা দিয়ে ঘন্ট বানায় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি আমার দিদা। থোড়ে মুগডালের ছিটা, ঘি। মোচার ঘন্টে চৌকো চৌকো আলু, আতপচাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বাগানে আলু, গাজর, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, বরবটি, পালংশাক - এইসব মামুলি জিনিষ তো আছেই। সেই সাথে আছে গন্ধপাতালির লতা। বড়া বানিয়ে ঘির সাথে খেতে হয়।জীবনের এইসব ছোট ছোট জিভের আনন্দ নেশার মত।
দাদুভাই এর বাগানে অনেকগুলো লেবু গাছ। কাগজি লেবু, গন্ধরাজ লেবু। লেবু খাওয়াই তো শুধু লেবুগাছের কাজ নয়। লেবুর পাতাও নানা কাজে লাগে। আমার বা ছোটবোন শ্যামার কিছু একটা পেট ব্যথা জাতীয় রোগ হলেই দিদার ধারণা হত তার সোনার টুকরা নাতনি দের উপর কারো নজর লেগেছে। তাড়াতাড়ি লেবু পাতায় তেল মাখিয়ে আমাদের পেটে ছুঁইয়ে তা চুলার আগুনে দিত। চুলাও কতরকম দিদার। মাটির খড়ির চুলা। ইলেক্ট্রিক হীটার। সে হীটারের পাশটা যদিও মাটি দিয়ে লেপা। আবার মার ওভেন। চুলার আগুনে লেবুপাতা ফটফট করে ফুটত। দিদা মাথায় ফুঁ দিয়ে বলত, যাও এবার শরীর ঠিক হয়ে যাবে। লেবুপাতা পুড়িয়ে আর মাথায় ফুঁ দিয়ে শরীর ঠিক করে দেওয়া এইসব নাদুস নুদুস তুলতুলে ডাক্তাররা আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু লেবুপাতা, সরষের তেল আর আগুনের গন্ধটুকু থেকে গেছে।
Comments
Post a Comment